ফজরের পর ফজিলতপূর্ণ আমল

নামাজ মুসলমানদের অন্যতম বিশেষ ইবাদত। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের রয়েছে এক বিশেষ মর্যাদা ও তাৎপর্য। এটি দিনের সূচনালগ্নে আদায় করা হয়, যখন চারপাশে নীরবতা ও প্রশান্তি বিরাজ করে। এ সময় মানুষের মন থাকে নির্মল ও একাগ্র, যা ইবাদতের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে ফজরের নামাজ আত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অপূর্ব মাধ্যম।

ফজরের নামাজ আদায় করতে ঘুম ভেঙে উঠে পরিশ্রম করতে হয়। এ কষ্ট স্বয়ং আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। এজন্যই ফজরের নামাজে রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও পুরস্কার। কোরআন ও হাদিসে ফজরের নামাজের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। তবে শুধু নামাজ আদায়ই নয়, ফজরের পরবর্তী সময়টুকুও দোয়া, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত ও ইসতেগফারের মাধ্যমে কাটালে এর সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। মহানবী (সা.)-এর জীবনাচারে দেখা যায়, তিনি ফজরের নামাজের পর সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন। সাহাবিগণও তার এ সুন্নাহ অনুসরণ করতেন।

একজন মুমিন বান্দা ফজরের নামাজ আদায়ের পর বিভিন্ন উপায়ে আমল করতে পারেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) ফজরের পর সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত নামাজের পাটিতেই বসে থাকতেন। ফজরের পরে সেসব দোয়া ও জিকির সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা এসেছে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।

আয়াতুল কুরসি : আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ইমান ২৩৯৫) উচ্চারণ : ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কায়্যুম, লা তাখুযুহু সিনাতুও ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ, মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজিনহি। এলামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়িম মিন ইলিমহি ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসিআ কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা এয়ুদুহু হিফজুহুমা, ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৫)

এ আয়াতটি পড়তে খুব বেশি হলে এক মিনিট সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচ মিনিট। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করলে এ মহাপুরস্কার লাভ করা সম্ভব।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া : হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি)

দোয়াটি হলো, ‘রাজিতু বিল্লাহি রব্বাও ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনাও ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা। অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

সাইয়্যিদুল ইসতেগফার : আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে উল্লেখ করেছেন, ‘যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা নিম্নের ইসতেগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (সহিহ বুখারি) উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাতাতু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার

কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহগুলো ক্ষমা করতে পারবে না।

জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া : হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (আবু দাউদ) উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।

সুরা ইয়াসিন ও ইখলাস : হাদিসে সুরা ইয়াসিন পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে। একবার সুরা ইয়াসিন পড়লে দশবার পুরো কোরআন পড়া পরিমাণ নেকি পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সকালে সুরা ইয়াসিন পড়া মুমিনের কাজ। যারা আরবি ভালোভাবে পড়তে পারেন না, তারা অন্তত সুরা ইখলাস পড়তে পারেন। তিনবার সুরা ইখলাস পড়লে একবার পুরো কোরআন পড়া পরিমাণ নেকি পাওয়া যায়।

অল্প কয়েক মিনিটের এই আমল আমাদের জীবনের দিকনির্দেশনা, আত্মশুদ্ধি এবং পরকালীন সফলতার নিশ্চয়তা দিতে পারে। তাই ফজরের পর অলসতা বা ঘুম নয়, বরং

আত্মনির্মাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মোক্ষম সময় হিসেবে এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা উচিত। এই আমলগুলো আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের জন্য কল্যাণকর, যা আমাদের অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে হেদায়াতের আলোয় পৌঁছে দিতে সক্ষম।

One comment
মোঃ আলা উদ্দিন লালমনিরহাট

খুবই সুন্দর ভাবে ফজরের পরের আমল বর্ননা করা হয়েছে। জেনুইন নিউজ কে ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *