ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়: এমওইউ বাতিলের দাবি হেফাজতের

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনে করা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অবিলম্বে বাতিল না হলে ‘কঠোর কর্মসূচির’ হুশিয়ারি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শনিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, সরকার ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি করায় হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। “নাগরিকদের মতামত ও উদ্বেগ উপেক্ষা করে কোনো স্পর্শকাতর ইস্যুতে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সরকার। অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।” সংগঠনটি বলছে, “মার্কিন স্বার্থের তাঁবেদার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এদেশে হতে দেওয়া যায় না— এটা দেশের ওলামায়ে কেরামের নীতিগত সিদ্ধান্ত।” হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ দুই নেতা বিবৃতিতে বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস সাধারণত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতেই দেখা যায়। সেই অফিস এখন আমাদের দেশে হওয়াটা সম্মানজনক নয়। বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধপীড়িত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও এখানে তাদের অফিস করতে চাওয়াটা রহস্যজনক। “তাছাড়া জুলাই বিপ্লবের দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস এদেশে কোনো দরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, সময় নষ্ট না করে জুলাই বিপ্লবের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা।” হেফাজত বলছে, “অতীতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন, ইসলামী শরিয়া ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে। নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও একই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া সমকামী ইস্যুটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মানবাধিকার দর্শন ও নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। “সম্প্রতি বাংলাদেশের ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধ অবজ্ঞা করে একজন সমকামী ব্যক্তিকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের নতুন দূত নিয়োগ দেওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। আমাদের দেশে নারী ইস্যুর আড়ালে অভিশপ্ত এলজিবিটি সম্প্রদায় প্রকাশ্যে নানা অপতৎপরতা শুরু করেছে।” ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে এমওইউ জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না, হেফাজতের হুঁশিয়ারি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আরো বিস্তৃত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার পরিণতি আমাদের কাছে পরিষ্কার। দৃশ্যত আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষার দায় বোধ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার। তাই বলে আমরা ওলামায়ে কেরাম চুপ করে বসে থাকতে পারি না। “২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে নিরীহ আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের গণজমায়েতের ওপর সংঘটিত বর্বর গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন আজ পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি। তাছাড়া ফ্যাসিস্ট হাসিনার কথিত জঙ্গি-নাটকসংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কখনো তারা অফিশিয়ালি উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।” আমেরিকা ও ভারত সুযোগ করে না দিলে এদেশে রাষ্ট্র কর্তৃক কখনো কথিত ‘জঙ্গিবাদ’ দমনের নামে আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটতে পারত না বলেও দাবি করেন তারা। বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, “এক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস থাকা না-থাকায় কিছু যায় আসে না। ফিলিস্তিনে গত ৩০ বছর ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস থেকেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাংলাদেশকে আমরা নতুন যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দিব না ইনশাআল্লাহ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *