বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক ইস্যুতে চূড়ান্ত ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দফায় তৃতীয় দিনের ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠক। উভয় দেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও অমীমাংসিত রয়ে গেছে আরও কিছু বিষয়। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর কারণে ধরে নেওয়া হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে সেটি বহাল থাকছে। যা পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ৯ জুলাই থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ ইস্যুতে বাংলাদেশ টানা বৈঠক করছে। তবে শেষ দিনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিছুটা মতামত নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে। যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-এ ধরনের একটি উচ্চপর্যায়ে বৈঠকের শুরুতে ব্যবসায়ী মহলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং আলোচনায় প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। এদিকে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকের শেষ দিনে আরও কিছু বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। তবে কয়েকটি বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দুপক্ষই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, নিজেদের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা চালু থাকবে। তারপর আবার দুদেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। সেই আলোচনা ভার্চুয়ালি এবং সামনাসামনি দুই প্রক্রিয়াতেই হতে পারে। খুব দ্রুতই সেই সময়-তারিখ নির্ধারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। সেখানে (ভার্চুয়ালি) আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। শুল্কসংক্রান্ত এই ৩ দিনের আলোচনার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, টানা ৩ দিনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান আশাবাদী যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক অবস্থানে পৌঁছানো যাবে। রোববার ১৩ জুলাই বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দেশে ফিরে আশার কথা। প্রয়োজন হলে তারা আবার যাবেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন আলোচনায় যুক্তিতর্ক ও দর কষাকষি কূটনৈতিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। এর ফলাফল তাৎক্ষণিক না এলেও আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। ফলে একতরফাভাবে চাপ গ্রহণ না করাই এ আলোচনার অর্জন।
এদিকে শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্য ও তৈরি পোশাকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বিশ্বখ্যাত ওয়ালমার্ট বাংলাদেশের পোশাকের কিছু ক্রয়াদেশ পিছিয়ে দিয়েছে, কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এবং দেশটির রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশ এই খাত থেকে আসে। কারখানা মালিকরা জানান, ১ আগস্ট থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকর হলে ক্রয়াদেশ কমে যাবে। কারণ, ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত খরচ তারা বহন করতে পারবেন না। প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন রয়টার্সকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শুল্কের কারণে ওয়ালমার্টের জন্য প্রায় ১০ লাখ সাঁতারের পোশাকের একটি ক্রয়াদেশ বৃহস্পতিবার স্থগিত করা হয়েছে। ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের সহকারী মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার ফারুক সৈকত প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ইকবাল হোসেনসহ অন্যদের কাছে ই-মেইলে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করায় বসন্ত মৌসুমের সব ক্রয়াদেশ স্থগিত করছি।’ ফারুক সৈকত রয়টার্সকে বলেন, অর্ডার স্থগিতের সিদ্ধান্ত ওয়ালমার্ট নয়, বরং ক্ল্যাসিক ফ্যাশন নিজেই নিয়েছে।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল কমিশনের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের প্রথম ৫ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।
Leave a Reply