১৫ বছর আগে চাকরি শুরু করছি। ১৫ বছর আগে মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা। এখনও সেই ১৫০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলে না, তেমন কিছুই হয় না। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। টাকার অভাবে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে পারি না। নাতিপুতিরা স্কুলে পড়ে, তাদের অনেক কষ্ট, খাতা কলম জুটাতে পারি না। কাপড়চোপড় দিতে পারি না। আমার ছেলেপেলে নাতিপুতিরা ভাতের অভাবে থাকে।’
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন সুফিয়া খাতুন। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের ঝাড়ুদার পদে কর্মরত।
সুফিয়া খাতুন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামের মৃত সুলতান আলী শেখের স্ত্রী। ৭ জন সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তিনি। অর্থের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন তারা। টাকার অভাবে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেন না। এমন অবস্থায় ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন জানিয়েছেন সুফিয়া খাতুন।
সুফিয়া খাতুন আরও বলেন, ২৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার একটা ছেলে একটা মেয়ে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে, সে শ্বশুর বাড়ি থাকে। ছেলেটা অসুস্থ, অসুখে ভুগছে। কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। সে এখন কর্ম করতে পারে না। যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। বর্তমানে অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না, চিকিৎসা করাতে পারি না। অসুস্থ ছেলের তিনটি ছেলে। তার জন্য প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার ঔষধ লাগে৷ ডাক্তার বলেছে ১০ লাখ টাকা লাগবে। সরকারের কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্য সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। যাতে আমি ছেলেপেলে ও নাতিপুতিদের নিয়ে খেয়ে বাঁচতে পারি। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে পারি। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা বা কার্ডমার্ড কিছুই আমি পায় না। খেয়ে না খেয়ে দিন যায়। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আমাদের সংসার চলে না। খাওয়ার ও চিকিৎসার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার ছেলে, বউমা ও নাতিপুতিরা ছেলের শ্বশুরবাড়ি গেছে।
তিনি আরও বলেন, কত স্যারের কাছে কাগজপত্র নিয়ে গেলাম বেতনটা বাড়ানো জন্য, কিন্তু স্যাররা তাকিয়েও দেখলো না, কিছু বললোও না। আমার দুঃখ একের পর এক এসেই যাচ্ছে। যার টাকা পয়সা আছে, তার সুখ আছে। আমাদের টাকাও নেই, সুখও নেই। কত লোককে বললাম, আমার ছেলের কার্ড করে দেও, টাকাপয়সা দরকার। কেউ তাকিয়েও দেখে না, সাহায্য করে না। আমাদের গরীব লোকের কথা কেউ শোনে না।
স্থানীয়রা বলেন, বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামে ঝাড়ুদার পদে চাকরি করে। সে মাসে ১৫০০ টাকা বেতন পায়। তার একমাত্র ছেলে সোহেল ভ্যানচালকের কাজ করতেন। তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। অসুস্থ অবস্থায় কোনো কাজ করতে পারে না। তারা খুব গরিব মানুষ। টাকার অভাবে খুব কষ্ট করে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছে৷ অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারে না। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রতিবেশী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, সুফিয়া ফুফুর ছেলে সোহেল ভাই অনেক অসুস্থ৷ কাজকাম করতে পারেনা। টাকার অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। চিকিৎসা করাতে পারে না। তাদের কষ্ট খুব। কেউ তাদের সাহায্য করে না। সুফিয়া ফুফু ১৫০০ টাকা বেতনে চাকরি করে। এই টাকা দিয়ে তেমন কিছুই হয় না। অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদেরকে সরকার বা বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে তারা উপকৃত হবে। সাহায্য ছাড়া চিকিৎসা করানোর সমর্থা তাদের নেই।
এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের কেয়ার টেকার সৈয়দা আশেকুন নাহার বলেন, সুফিয়া খাতুন ১৫ বছর ধরে ঝাড়ুদার পদে চাকরি করে৷ মাসে বেতন পান ১৫০০ টাকা। পরিবারে কর্ম করার কেউ নেই। এই টাকায় সংসার চলে না। তার ছেলে অসুস্থ। সে আগে ভ্যান চালাতো, এখন কোনো কাজ করতে পারে না। অর্থের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকেন তারা। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারে না। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকার বা বিত্তবানদের কাছে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্রী বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের ঝাড়ুদার পদে কর্মরত সুফিয়া খাতুন ১৫০০ টাকা বেতন পান। তার বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। আগামী মাস থেকে তার বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
Leave a Reply