১ আগস্টে প্রতিবাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন বাঁধন

জুলাই বিপ্লবে সোচ্চার ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। বৃষ্টিতে ভিজে গত বছর ১ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেটে দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশে অংশগ্রহণের সেই অভিজ্ঞতা তিনি লিখেছেন ফেসবুকে।

বাঁধন বৃহস্পতিবার সকাল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাত থেকেই মানসিকভাবে আমি অতিরিক্ত চাপে ছিলাম। তবে একধরনের উত্তেজনাও বোধ করছিলাম, যে কারণে হয়তো সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ভোরে বিছানা থেকে উঠি। স্নিকার্স পায়ে দিই। কারণ, আমি জানতাম না আমার জীবনে আজ কি ঘটতে যাচ্ছে।’

গেল বছরের ১ আগস্টের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বাঁধন ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে সেদিন মা-বাবার সঙ্গে ছিল। তারা তিনজনই জানত না আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি তাদের এতটুকুই বলেছিলাম, কিছু মিডিয়ার বন্ধু মিলে একটা ইভেন্টে যাচ্ছি। তারপরেই শঙ্কা নিয়ে বাসা থেকে বের হই। দৃশ্যমাধ্যমের এই আন্দোলন জোরালো করতে আগে থেকেই ব্যানার, পোস্টারসহ যাবতীয় কিছু প্রস্তুত ছিল। বাসা থেকে বের হয়েই আমি চলে যাই নিকেতন। সেখান থেকে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, মাইক ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে নিয়ে নেই। তখন কারফিউ ছিল। এর মধ্যে আমরা জানতাম না সামনে কি হতে চলেছে। আমার ড্রাইভারকে বলেছিলাম আপনার সঙ্গে মোবাইল আছে, যদি কিছু ঘটে ভিডিও করে রাখবেন। ড্রাইভার ভিতুর মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, আমিও ভীত ছিলাম সেই সময়।’

‘সেই সময় ক্রমেই তারকা, শিল্পী, কলাকুশলীরাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ভিড় করতে থাকেন। সময়টা ছিল ১১টার মতো। এর মধ্যে বৃষ্টি দেখা দেয়। আমি খামার বাড়ি এলাকায় বাবার গাড়িটি রেখে ফুটপাতে অপেক্ষা করি। আরও কয়েকজনকে দেখি। পুলিশ এসে বলে আমরা কোনো সভা বা প্রতিবাদ করতে পারব না। কারণ, পাশেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। তখনই রাজীব ভাই, মোমেন ভাই, মামুন ভাই এলেন। প্রোগ্রাম বাতিল করতে সিনিয়র পুলিশ তাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করলেন। আমি চুপচাপ এসব দেখে সামনে পা বাড়ানো শুরু করি’- যোগ করেন বাঁধন।

সেই সময় পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান এই অভিনেত্রী। কারণ পুলিশ তাদের নিরাপত্তার কারণে বারবার সরে যেতে বলেন। এই অভিনেত্রী লেখেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের ভয়ও দেখান। কারণ, আমরা সবকিছুকে অবজ্ঞা করে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে যাচ্ছিলাম। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে প্রতিবাদের অনুমতি পাই।’

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যার’ প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সেই অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে বাঁধন লেখেন, ‘তারা চেষ্টা করেছিল মামুন ভাইকে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে। কিন্তু লিমা আপা, রাজীব ভাই সবাই মিলে আমরা হেঁটে ফার্মগেট চলে আসি। পুলিশ আমাদের ওপর খুশি ছিল না। পরে বৃষ্টির মধ্যে ব্যানার নিয়ে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাই। আমি শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করি। এটা ছিল আমার জীবনের সেরা পাওয়ার ফুল মোমেন্টস। আমি কখনোই দিনটির কথা ভুলব না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *