‘শ্রাবন্তীর মতো লোক বিধানসভায় দরকার’

গত ২১ জুলাইয়ের শহীদ মঞ্চে উপস্থিত থেকেই জল্পনার শুরু। টালিউডের কলাকুশলীদের সঙ্গে সমানতালে বসেছিলেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।

তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও উচ্চারিত হয় তার নাম। এ নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে একুশের মঞ্চে শ্রাবন্তীর উপস্থিতিতে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

তাহলে কি আবার রাজনৈতিক ময়দানে প্রত্যাবর্তনের পথে হাঁটছেন অভিনেত্রী? এবার কি তাহলে বেহালা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামছেন শ্রাবন্তী?—এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কলকাতার আকাশ-বাতাসে।

রাজনীতির জগতে নতুন মুখ নয় অভিনেত্রী। এর আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে লড়াইয়ে মাঠে নেমেছিলেন শ্রাবন্তী। প্রতিপক্ষ ছিলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্র—বেহালা পশ্চিম। যদিও ভোটের ময়দানে হেরে যান শ্রাবন্তী।

অভিনেত্রী সে নির্বাচনে জেনে গিয়েছিলেন— শুধু জনপ্রিয়তা নয়, রাজনীতির মাঠে আরও অভিজ্ঞতা, সংযোগ এবং কৌশল দরকার। আর তাই সময়ের সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। শেষমেশ সামাজিক মাধ্যমে টুইট করে বিজেপি ছাড়ার ঘোষণাও দেন শ্রাবন্তী।

এরপর দীর্ঘ সময় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন শ্রাবন্তী। কিন্তু আবারও বিধানসভা ভোট আসন্ন। তার আগেই শহীদ দিবসের মঞ্চে তার সক্রিয় উপস্থিতি নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত। অভিনেত্রী নিজেও সংবাদমাধ্যমে বলেন, মানুষের পাশে থাকাই আসল পূজা।

তিনি বলেন, যতটা আমার ক্ষমতা আছে, ততটাই পাশে থাকতে চাই। আর যদি সেটি বেহালা পশ্চিম হয়, তাহলে তো বাড়ির কাছেই। নিজের ভিটে। এ কথার পর জল্পনা আরও তুঙ্গে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর বেহালা পশ্চিম কার্যত রাজনৈতিকভাবে অনাথ হয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কার্যকর জনপ্রতিনিধি না থাকায় সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ জমতে থাকে। পরিষেবা ও উন্নয়নের অভাবে অসন্তোষ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল চাইছে দিতে নতুন বার্তা— নতুন মুখ। শ্রাবন্তী সেই রূপে আদর্শ প্রার্থী হতে পারেন কিনা, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

তৃণমূলের অন্দরমহলে এ নিয়ে মতভেদ থাকলেও নেতাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে শ্রাবন্তীর প্রতি সমর্থন জানাতে শুরু করেছেন। কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেছেন, আমি ওর ফ্যান। যদিও সিনেমা দেখার সুযোগ হয়নি। তবে বিজ্ঞাপন দেখেই মুগ্ধ। বিধানসভায় এমন প্রাণবন্ত লোক দরকার।

অন্যদিকে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। যদিও সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, তা দলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই হবে।

এদিকে বাস্তবতা স্বীকার করতে ভোলেননি অভিনেত্রী। শ্রাবন্তী বলেন, ভবিষ্যৎ কেউ বলতে পারে না। রাজনীতি এত সোজা নয়। কীভাবে মানুষের পাশে থাকতে হয়, কীভাবে কাজ করতে হয়, তা শিখতে হবে। তার এ বক্তব্যে একদিকে যেমন সংযম ও পরিণত চিন্তাভাবনা ধরা পড়ে, তেমনই রাজনৈতিক সদিচ্ছাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সব মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস যদি শ্রাবন্তীকে টিকিট দেয়, তবে তা নিঃসন্দেহে হবে এক সাহসী ও কৌশলী পদক্ষেপ। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম হলেও জনসংযোগ এবং জনপ্রিয়তায় শ্রাবন্তী অনেকের থেকে এগিয়ে। ভোটের ময়দানে সেই শক্তিকে কতটা কাজে লাগাতে পারবেন তিনি, সেটাই দেখার। আর যদি তিনি প্রার্থী হন, তবে বেহালা পশ্চিমের মাটিতে শুরু হবে নতুন লড়াই—যেখানে পুরোনো অধ্যায়ের পাতা বন্ধ হয়ে, লেখা হবে নতুন ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *