বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) সংসদীয় আসন। বর্তমানে বিএনপির ছয় সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ বলয় নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী অনেকটাই শক্ত অবস্থানে আছেন। জামায়াতের একক প্রার্থী আর বিএনপির ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনের দুটি উপজেলায় জুলাই বিপ্লবের পর থেকে আধিপত্য ও নেতৃত্ব নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।
আসনটিতে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি নির্বাচনে বিএনপির শহিদুল ইসলাম নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একক আধিপত্যের কারণে দলকে সুসংগঠিত রাখতে না পারায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসনটি হারায়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল আজম খান চঞ্চল নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতের মতিয়ার রহমান। বিএনপির শহিদুল ইসলাম তৃতীয় অবস্থানে নেমে আসেন।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও সাবেক এমপি মরহুম শহিদুল ইসলামের ছেলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে তারা তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষায়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল বলেন, বিগত দিনে দলের জন্য ত্যাগ ও তৃণমূল সুসংগঠিত রাখাসহ এলাকার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে দল তাকেই প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করবে বলে তিনি আশাবাদী। মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি আমার দেশকে বলেন, আমার বাবা মরহুম শহিদুল ইসলাম টানা তিনবারের এমপি ছিলেন এই আসনে। বাবার ইমেজ নির্বাচনে কাজে লাগাতে চান তিনি। বিগত দিনে দলের জন্য হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বহুবার। সে কারণে দলের হাইকমান্ড অবশ্যই তাকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করবেন বলে তার বিশ্বাস।
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন। আমার দেশকে তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে দলটির জন্য কাজ করেছি এবং করছি। বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের দেওয়া হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। দল সবকিছু বিবেচনা করে তাকেই বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করবে বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাসাসের সাবেক সাধারণ সম্পদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক নির্বাহী কমিটির সহসাংস্কৃতিক বিষায়ক সম্পাদক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খানও মনোনয়ন চাইবেন বলে আমার দেশকে জানান। তিনি ২০১৮ সালেও এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতের মতিয়ার রহমান। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে মতিয়ার রহমান হেরে যান।
মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহসাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি কামরুজ্জামান সিদ্দিক এবারও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর থেকে আসনটি কবজায় নিতে জামায়াত তাদের নির্বাচনি ঘর গোছাতে শুরু করে। বেশ আগেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একক প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। নারীদের সর্বোচ্চ ভোট সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে দলটির নারী নেতাকর্মীরা ঘরোয়া ভাবে বিভিন্ন সভা-সেমিনার চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে কৌশলে এগোচ্ছে জামায়াত।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মতিয়ার রহমান আমার দেশকে বলেন, এই আসনে জামায়াতে ইসলামী অনেক শক্তিশালী। বিগত দিনের কথা চিন্তা করে সাধারণ ভোটাররা জামায়াতকেই ভোট দেবেন। এই আসনে জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠকি কর্মকাণ্ড থাকলেও নেতাকর্মীদের এখনো গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি।
Leave a Reply