শরীরের জমা কিছু চর্বি আছে যা কিডনি, যকৃত ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে জড়িয়ে ধরে। এই চর্বি শুধু পেট বড় করে না বরং শরীরে ‘ইনফ্লামেইশন’ বা প্রদাহ সৃষ্টি করে। যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
এই ভয়ংকর চর্বির নাম ‘ভিসেরাল ফ্যাট’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ন্যাশনাল জিউইশ হেলথ’-এর ‘কার্ডিওভাসকুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’ বিভাগের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “ভিসেরাল ফ্যাট হচ্ছে সব কিছুর ইঙ্গিত। এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, হৃদরোগের ঝুঁকি, ফ্যাটি লিভার ও টাইপ টু ডায়াবেটিস- সবই ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যায়, যা দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে।”
এই অতিরিক্ত চর্বি কেবল শারীরিক সমস্যাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও বাজে প্রভাব ফেলে।
ফ্লোরিডার ‘ইন্সটিটিউট ফর নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজেস’-এর স্নায়ু-বিশেষজ্ঞ ও আলঝহাইমার’স এবং পারকিনসন’স রোগ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ ডা. কেলিয়ান নিয়টিস বলেন, “ভিসেরাল ফ্যাট’ বিপাকীয়ভাবে ক্ষতিকর এবং এটি প্রচুর পরিমাণ প্রদাহভিত্তিক রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা মস্তিষ্কের গঠন নষ্ট করে দিতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে।”
গবেষণায় দেখা গেছে- পেট যত বড় হয়, ততই মস্তিষ্কের ‘মেমোরি সেন্টার’ ছোট হয়ে যায় এবং আলঝহাইমার’স রোগের উপসর্গ যেমন ‘বেটা-অ্যামিলয়েড প্ল্যাক’ ও ‘টাউ ট্যাঙ্গলস’ আগেভাগেই দেখা দিতে শুরু করে।
এমনকি চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর বয়সেও এই ক্ষয় শুরু হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন শরীরে ভিসেরাল ফ্যাট জমেছে?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’এর তথ্যানুসারে অনুসারে, শরীরের মোট চর্বির মধ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ভিসেরাল ফ্যাট থাকলে সেটা স্বাভাবিক। তবে এর বেশি হলে বিপদ।
নারীদের ক্ষেত্রে যদি কোমরের মাপ ৩৫ ইঞ্চির (৮৮.৯ সেন্টিমিটার) বেশি হয় এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চির (১০১.৬ সেন্টিমিটার) বেশি হয়, তাহলে ভিসেরাল ফ্যাটের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় বলে জানায়- যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি)।
এছাড়া, যদি শরীরে চর্বির পরিমাণ পেশির তুলনায় বেশি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে ভেতরের চর্বিও বেশি।
‘ডেক্সা স্ক্যান’ নামের একটি বড় এক্স-রে যন্ত্র দিয়ে এই ভিসেরাল ফ্যাট ও পেশির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। চাইলে বাড়িতেও বায়োমেট্রিক স্কেল ব্যবহার করে এই তথ্য পাওয়া যায়।
ভিসেরাল ফ্যাট কমানোর পন্থা
ডা. ফ্রিম্যান বলেন, “এই চর্বি জীবনযাপনের মাধ্যমে কমানো সম্ভব। আর এইটাই যেন যৌবনের গোপন চাবিকাঠি।”
নিয়মিত হাঁটা ও কার্ডিও ব্যায়াম
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট জোরে হাঁটুন। এমনভাবে হাঁটতে হবে যাতে হাঁপিয়ে যান, কথা বলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এছাড়া সাঁতার, দৌড়, সাইকেল চালানো এসবও উপকারী।
শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম (রেজিস্টেন্স ট্রেনিং)
শুধু হাঁটলেই হবে না। শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য ওজন তুলে ব্যায়াম, লঞ্জ, ডেডলিফট, প্ল্যাঙ্ক, প্রেস, পুশআপস এবং পুলআপস করতে হবে।
এগুলো বহু পেশিকে একসাথে কাজ করতে বাধ্য করে, যা বেশি ক্যালোরি খরচ করে এবং শরীরকে চাঙা রাখে।
ব্যায়ামের সময় ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে হবে। ‘সেট’ ও ‘রেপিটিশন’ বাড়াতে হবে। আর বিরতির সময় কমাতে হবে।
যদি ব্যায়াম করতে গিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে প্রশিক্ষকের সাহায্য নিতে হবে।
‘ইন্সটিটিউট ফর নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজেস’-এর গবেষণা পরিচালক ড. রিচার্ড আইজ্যাকসন বলেন, “যদি সব কিছু ঠিকঠাক করেও পেশি না বাড়ে, তাহলে হরমোনজনিত সমস্যা, যেমন- টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি আছে কি-না, তা যাচাই করাতে হবে।”
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা
ডা. ফ্রিম্যান বলেন, “আধুনিক প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি বাদ দিয়ে প্রধানত ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, গোটা শস্য ইত্যাদি নিয়ে গঠিত খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যান।”
Leave a Reply