দাম সমন্বয়ে স্বর্ণের ‘হাফসেঞ্চুরি’, ভরি ছাড়াতে পারে ২ লাখ টাকা!

সবশেষ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা। যা দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা কার্যকর হবে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে। এর মাধ্যমে চলতি বছর এখন পর্যন্ত দাম সমন্বয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করেছে স্বর্ণ। ৫০ বার দাম সমন্বয়ের মধ্যে ৩৪ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে মাত্র ১৬ বার।

বাজুস বলছে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে উত্থান-পতনের কারণেই দেশের বাজারে ঘন ঘন দাম পরিবর্তন করতে হয়েছে। অস্থিরতা চলতে থাকলে বছরের বাকি কয়েক মাসে আরও কয়েকবার দাম সমন্বয় হতে পারে।


বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করে স্বর্ণের দাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে। আর চলতি বছর শুরু থেকে অস্থির ছিল স্বর্ণের বিশ্ববাজার। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ ও মার্কিন ট্যারিফ নীতি। যার প্রভাব পড়েছে দেশ ও স্বর্ণের বিশ্ববাজারে।

তবে গত আগস্ট মাসে স্বর্ণের বিশ্ববাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি মাসে আবারও অস্থির হয়ে উঠছে বাজার। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা জোরালো হওয়া। পাশাপাশি বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় স্বর্ণ মজুতের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়েছে। যার প্রভাবে বিশ্ববাজারে রেকর্ড দামে পৌঁছেছে স্বর্ণ। দেশেও স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে।

দেশের বাজারে দাম সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিশ্ববাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম হলেও দেশে সেটি হয় না। অন্তত একদিনের ব্যবধানে দাম সমন্বয় করা হয়। শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্ববাজারে ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সব দেশেই দাম সমন্বয় করতে বাধ্য হয়। তবে চলতি বছর এত দ্রুত এত বেশি বার দাম সমন্বয় হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বিশ্ববাজার দোলাচলে থাকার কারণে।

স্বর্ণের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, স্বর্ণের দাম প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ওপরে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা চলতে থাকলে এটি ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঊর্ধ্বমুখী এই দামে কমে গেছে বেচাকেনা, বেকার হয়ে পড়ছেন কারিগররা। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে দাম কমে আসতে পারে।

এদিকে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছুঁয়েছে নতুন রেকর্ড। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বল কর্মসংস্থান তথ্য ও সুদের হার কমার প্রত্যাশার পাশাপাশি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বাড়িয়ে দিয়েছে মূল্যবান এই ধাতুর চাহিদা। ক্যাপিটাল ডটকমের আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডা বলেন, ‘দুর্বল অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং মার্কিন সুদের হার কমানোর প্রত্যাশার প্রভাবেই মূল্যবান এই ধাতুর দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত একটি বড় কারণ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডের স্বাধীনতার ওপর সমালোচনা, যা ডলারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।’

জ্যানার মেটালসের সিনিয়র কৌশলবিদ পিটার গ্রান্ট বলেন, ‘স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখীতা এখনও চলমান। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে এর দাম ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। আর আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দর ৪ হাজার ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে।’

কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘যদি ফেড একাধিকবার সুদের হার কমায় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তি অনিশ্চিত থেকে যায়, তবে বছরের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দাম বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ ডলার কিংবা তারও বেশি হতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *