আগামী নির্বাচনে জেন–জি প্রজন্ম হবে ‘ওয়াইল্ড কার্ডস’: ইনোভিশন

আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এই প্রশ্নে এখনো সিদ্ধান্তহীন ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ। এই সংখ্যা বাড়ছে। সিদ্ধান্তহীন ভোটার বেশি জেন–জি প্রজন্ম (যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর) ও নারীদের মধ্যে। এবারের ভোটে নির্ধারক ভূমিকা রাখতে পারেন জেন–জি, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা। এসব তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিং বলছে, এবারের ভোটে জেন–জি হবে ‘ওয়াইল্ড কার্ডস’ (গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক)।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনায় ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য ‘ভোটারদের সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ভিন্নতার প্রভাব’ শিরোনামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইনোভিশনের সঙ্গে এই আয়োজনে যুক্ত ছিল ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএন নামের দুটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইনোভিশনের ওই জরিপটি প্রকাশ করা হয়। ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮ বিভাগ ও ৬৪ জেলার বিভিন্ন বয়সের ১০ হাজার ৪১৩ জন মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছিল। সেখানে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপি, ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও ৪ দশমিক ১০ শতাংশ উত্তরদাতা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করার কথা বলেছেন। আর ভোটের ক্ষেত্রে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দ আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ)।

গত মাসে প্রকাশিত এই জরিপের আরও খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয় আজকের সভায়। ইনোভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আগামী নির্বাচনে পাঁচটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জেন–জি হবে ওয়াইল্ড কার্ডস। রাজনৈতিক দলগুলোকে শহর ও গ্রামের পার্থক্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারী ভোটের অন্তর্নিহিত মাত্রাগুলো বোঝা প্রয়োজন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন ও আত্মবিশ্বাস জয় করার বিষয়টি ভোটের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে। অনেক ভোটারের সিদ্ধান্তহীনতার (বিশেষ করে সিলেট ও খুলনা) বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না।

গত মার্চে প্রথম পর্যায়ের জরিপ প্রকাশ করেছিল ইনোভিশন। সেখানে সিদ্ধান্তহীন ভোটার ছিল ২৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপে সেটি আরও ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর সিদ্ধান্তহীন ভোটার বেশি জেন–জিদের মধ্যে, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর। নারীদের মধ্যেও সিদ্ধান্তহীন ভোটারের হার অনেক বেশি (৩৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ)।

আঞ্চলিকভাবে সিদ্ধান্তহীন ভোটার সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে (৪৩ দশমিক ১০ শতাংশ)। রংপুর বিভাগের ৪০ দশমিক ২০ শতাংশ, বরিশালের ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ ও খুলনা বিভাগের ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ এখনো ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আগামী নির্বাচনে নিরাপদে ও ভয়ভীতি ছাড়া ভোট দেওয়া যাবে কি না, জরিপে এ প্রশ্নের উত্তরে ৭৮ শতাংশ মুসলিম ভোটার হ্যাঁ–সূচক উত্তর দিয়েছেন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা ৭২ শতাংশ।

ভোটাররা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন, তা বোঝার জন্য জরিপে চাঁদাবাজিবিষয়ক খবরের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল জরিপে। এ প্রশ্নের উত্তরে সংবাদপত্র, ব্যক্তিগত বা পরিচিত–আত্মীয়–পরিজনের অভিজ্ঞতা ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কথা বলেছেন উত্তরদাতাদের অনেকে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ বলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা।

রুবাইয়াৎ সারওয়ার বলেন, ‘বিভিন্ন জরিপ বলছে, একটা কম্পিটিটিভ (প্রতিযোগিতামূলক) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ থাকুক বা না থাকুক, মানুষ ভোট দিতে চাইছে। জেন–জি, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা এবার নির্ণায়ক হবেন।’

পিআরের কথা শোনেননি অধিকাংশ নারী

সম্প্রতি জামায়াতসহ সাতটি রাজনৈতিক দল পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়ে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। পিআরের বিষয়টি নিয়ে ইনোভিশনের জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে ৬৮ দশমিক ২০ শতাংশ নারী এবং ৪৫ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তাঁরা পিআর পদ্ধতির কথা শোনেননি বা এ বিষয়ে যথেষ্ট জানেন না। এ ছাড়া পিআরের কথা শোনেননি বা যথেষ্ট জানেন না বলেছেন গ্রামের ৫৯ শতাংশ মানুষ। শহরের ক্ষেত্রে তা ৪৯ শতাংশ।

ভোটের পছন্দে কী কী বিষয় প্রভাব ফেলতে পারে, সেটি জরিপে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তুলনামূলক কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের কাছে দলের মার্কাকে গুরুত্বপূর্ণ বলার প্রবণতা বেশি।

আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে না থাকে, তাহলে কী করবেন সে বিষয়ে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল জরিপে। জবাবে মুসলমানদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ মন্তব্য করতে চাননি, ভোট দেবেন না বলেছেন ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ মন্তব্য করতে চাননি আর ১১ শতাংশ বলেছেন ভোট দেবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *